গল্প
ছোটগল্প (যদি কোনো দিন)
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
![]() |
যদি কোনোদিন |
যদি কোনো দিন
“হেটে গেছি আমি আয়ু রেখা ধরে।”
ঘুম থেকে উঠে ফোন হাতে নিলো রিফাত। দৈনিন্দিন রুটিন, ঘুমের মধ্যে থেকে বেরিয়ে বাস্তবিক দুনিয়ার অবাস্তবিকতায় আসতে তার ফোন প্রয়োজন। মানুষ বাস্তবতা থেকে এতটা বিচ্ছিন্ন যে ঘুম ভাঙার পরে ফোন ছাড়া বাস্তবতা বুঝা যায়না। ফোনের লোক স্ক্রিনে পরিচিতি এক প্রোফাইলের ম্যাসেজ। এর ম্যাসেজের আশায় ঘন্টার পরে ঘন্টা রাত অপেক্ষা করে থাকতে পারতো সে। একটা ম্যাসেজ তার রাত্রের সমস্ত ক্লান্তি নোটিফিকেশনের সাউন্ডের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে দিতে পারতো। টিভি তে দেখা ম্যাজিকের মতন, ম্যাজিশিয়ান কিভাবে কাপড়ের নিচে কবুতর নিয়ে হারিয়ে দেয়, সেই কবুতর ক্লান্তি আর ম্যাসেজ ম্যাজিশিয়ান। নোটিফিকেশনে ম্যাসেজ পড়া যাচ্ছে না, শুধু দেখা যাচ্ছে সুস্মিতা ম্যাসেজ করেছে। ভাবলো ম্যাসেজ দেখবে না। একটা সময় পরে আর দেখা কোনো কাজে আসে না, তবুও গল্প আগাতে হবে সেই আগানোর স্পিহায় আমি গল্পের কথক রিফাতকে দিয়ে ফোনের ম্যাসেজ চেক করলাম।
মাথার চুলে গাজরা দেওয়া কালো শাড়ি পরিহিতা এক সপ্তসীর ছবি প্রোফাইলে। আধুনিকতা এখন নব্বুই দশকের সংস্কৃতির দিকে ক্রমশই ঢোলে পড়ছে। মানুষের স্মৃতি তার বর্তমানের থেকেও স্পষ্ট, তাকে বর্তমানের থেকেও আকৃষ্ট করে। স্থির এক জায়গাতেই যেমন নিস্প্রান তেমনি জড়তা নিয়ে থেমে আছে ছবিটা, বেশিক্ষন তাকাতে ইচ্ছে করে না। নকল মনে হয়, আছে অথচ শুধু কিছু ০ আর ১ সংখ্যার কোডের মধ্যে। প্রোফাইল ছবিটার দিকে কিছুক্ষন ঘুমুঘুমু চোখে তাকিয়েছিলো রিফাত, যে জানে সুস্মিতার ইনবক্সে গেলেই ওর ঘুম ছুটে যাবে। আরও নানান কিছু হবে, না চাইতেও এমন কথা বলতে হবে যা সে কস্মিন কালে নিজেকেও বলতে পারতোনা। স্মৃতি থেকে স্মৃতি টেনে হেঁচড়ে বের করে আনতে হবে। যেতে হবে এমন সব ভাবনায় যার অন্ত সে খুঁজতে চায়না। অথচ আকাশে অজ্ঞান হওয়া পাখি যতই মাটি না চাক, মাটিতে তাকে পড়তেই হবে।
ইনবক্সে তিনটা ম্যাসেজ, প্রথমটা ছোট। রিফাতের মনেহয় কথা জ্যান্ত, মানুষ যে কথা বলে সেইটা জ্যান্ত না। কথার মধ্যে কথা জ্যান্ত, অথচ ফোনের মধ্যে দিয়ে সেই জ্যান্ত ভাব বুঝা যায়না, প্রোফাইল পিকের মতোই জড়ো বস্তু মনে হয় কথাকে। একবারে অনেক্ষন এমন মৃত টেক্সটিং করতে ওর অসহ্য লাগে, অথচ ভালোও লাগে। মনে হয় কিছু তো হচ্ছে, একই মানুষের মধ্যে ক্রমাগত দুইটা আলাদা স্বতন্ত্র চিন্তা ঘুরে চলেছে যেগুলো একই অনুভূতি থেকে আগত এর থেকে বেশি দোনামোনা আর কিছু হতে পারেনা। প্রথম ম্যাসেজ টা ও ঘুমানোর আগেই দেখেছিলো, “দাড়া যাবিনা, কি পাইছিস তুই। খালি তুই যেমন বলবি তাই নাকি?” এর পরে আর রিফাত ম্যাসেজ দেখেনি, সকাল এগারোটার দিকে এমন ম্যাসেজ দেখে প্রচন্ড ঘুম আগেই পাচ্ছিল, আর কথা চালাচালি করার মোটিভেশন না পেয়ে ফোনটা পাশে রেখে ঘুমিয়ে গেলো। চোখ বুজতেই মনে হচ্ছিলো সেই শত বছরের ক্লান্তি জোর হয়ে আসছিলো চোখের পাশে। যে ক্লান্তি সুস্মিতা অনেকখানি ভুলিয়ে দিতে পারতো, আসলে ভুলিয়ে দেওয়া একটা অদ্ভুত ব্যাপার। ভুলে যাওয়াও, ভুলে যাওয়া মানে আছে কিন্তু ভুলে গেছি। আর ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সবকিছুই আছে আমি তোমায় সাহায্য করছি ভুলতে। রিফাত বাস্তবতা অনেকটা ভুলতে পারতো সুস্মিতার সান্নিধ্যে, অথচ কৃত্তিমতা সারাক্ষন বিরাজ করতো এপাশপাশ থেকে। এক কাত হয়ে শুয়ে ওপর কাত ফিরতে হাজার বছর লেগে যাবে টাইপের অনুভূতি। এইগুলো স্মৃতি থেকে আগত নাকি মস্তিস্ক অবসরে এমন ক্লান্তি তৈরী করে রিফাত জানেনা।
সিন্ করা ম্যাসেজ গুলার নিচে আরো তিনটা ম্যাসেজ, “কিরে, ঘুমাইছিস না?” “কথা শেষ না করেই ঘুমাইছিস?” “আসলে তুই কি চাচ্ছিস?” শেষের টেক্সটি। এই ম্যাসেজটি রিফাতকে মনে করে দিলো সে কি চাচ্ছে, মনে করিয়ে দিলো কত নিবিড় ভাবে ও মিশে যেটা চায় কোনো গ্রহাণুর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া ধুলার সাথে। আরো কত শতশত চাওয়া। কোনো ভাবান্তর না ভেবে রিফাত সোজা ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়া শুরু করলো, সে তো আর ডিনাই করতে পারেনা সুস্মিতাকে। “কি চাচ্ছি আমি ভালোভাবে জানিনা।” সুস্মিতা তৎক্ষণাৎ সিন্ করলো। রাগ হচ্ছে কি সুস্মিতার? হচ্ছে সম্ভবত, রিফাত মুখের উপরে ফোন রেখে দিয়েছে সুস্মিতার। সুস্মিতা সামনে থাকলে এমনটা সে করতে পারতো কিনা সেইটাই ভাবছিলো রিফাত তখন, বোধয় পারতো। তার মধ্যে সর্বত্র এমন স্বভাব বিদ্যমান, ভালো লাগছে না কিংবা ক্লান্ত লাগছে সে চাইলে দেখেছে ক্লান্তি কিংবা ভালো না লাগা ভুলে থাকা যায়। আসলে তো সমস্তটাই মস্তিষ্কে এইটাকে শুধু বুঝ দিয়ে মানিয়ে নিতে হয়, ছোট শিশুর খেলনা কিনে চাওয়ার বায়নাকে মানুষ যেভাবে না দিয়ে কথা আর আদর নিয়ে মানিয়ে নেয়। সুস্মিতা রেগেই গেছে, সামনে নেই কাছে নেই অথচ কথার মধ্যে সে ধার, টেক্সটের রিপ্লাইয়ের তিনটা ফোটা যেগুলো এতক্ষন ঢেউ তুলে সুস্মিতার রিপ্লাই জানান দিচ্ছিলো ডিকোড হয়ে সেগুলো এখন নেটিভ ল্যাঙ্গুয়েজ বাংলায়, “বালের মতন কথা বলবিনা, আমার জীবনটা শেষ করে দিচ্ছিস তুই। আর বলছিস কি চাস নিজেই জানিস না।”
রিফাত হাসলো, বহুক্ষণ বহুকাল সে সুস্মিতার সঙ্গে কথা বলে দেখেছে। কালান্তরের ফাঁকে ফাঁকে ঠিক এইটাই হয়েছে, আগামীতেও এইটাই হবে। সাপের লেজ কেটে ধরার মতন, নিজের লেজ সাপ নিজে কেটে নিয়েই ইনফিনিটিতে ঘুরছে। নিজের লেজ নিজেই কেটে চলেছে। শক্ত করে কামড়ে আছে ছেড়ে দিলেই আবার সে সাপ হয়ে যাবে, ইনফিনিটিতে ঘোরা হবেনা। ঘুম থেকে উঠে টেবিলের পাশে খোলা রাখা গ্লাস টা থেকে একগ্লাস পানি খেয়ে নিয়েছিল রিফাত, সেই পানিরই ঢেকুর উঠলো এখন। সুস্মিতার টেক্সট দেখে ফোনটা বুকের উপরে রাখলো। বিছানা থেকে উঠতে হবে, অনেক কাজ পরে আছে। ঘরের সবই এলোমেলো। এখন কত বাজে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলো দুপুর দুইটা, আজকে ছুটির দিন অফিস নেই ভাগ্য ভালো। নাহলে যে ক্লান্তি লাগছিলো অফিসে গেলেই মোজাম্মেল সাহেবের ঝাড়ি শুনতে হতো, “কি ভাই, আপনাকে দেখেই মনে হয় কেবল ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট থেকে যুদ্ধ সেরে আসলেন। এতটা বিধ্বস্ত ভঙ্গিতে অফিসে আসেন কি দেখতে? কাজেও তো অনেক বাকি। প্রেজেন্টেশন রেডি করেছেন? সকালে তো ব্রাশটাও ঠিক মতন করেন না, আপনাকে না বলেছি উসখুস ভাবে অফিসে আসবেন না। ফর্মালিটি বলে তো একটা ব্যাপার আছে। আপনাকে দেখে মনে হয় বাড়িতে ঘোরাফেরা করছেন।”
ঠিক এমন ভাবে না বলেও এমন টাইপের কয়েকটা কথা নিশ্চিত শুনিয়ে দিতো ম্যানেজার মোজাম্মেল। অবশ্য লোকটা রিফাতকে অনেকটা স্নেহেও করে। রিফাত দেখেছে মোজাম্মেল সাহেব চাইলেই তাকে বের করে দিতে পারতো অফিস থেকে অথচ দিচ্ছে না। এর কারণ রিফাত বুঝেনি, তাকে গালিগালাজ করতে ম্যানেজার সাহেবের ভালো লাগে জন্যে বের করেননি নাকি স্নেহের প্রভাবে। নাকি লাইফ মিজারেবল হবে জন্যেই তার এতো ক্লান্তি সব কিছুতে, ক্লান্তি ফোন উঁচু করে ধরে রেখে সুস্মিতার লিখে যাওয়া ম্যাসেজ পড়তেও। অথচ রিফাত একটা ম্যাসেজও ব্যাড দেয়না সুস্মিতার, প্রত্যেকটা খুঁটিয়ে খুটায়ে পরে সে। এবং সামনে থাকে ওর মুখভঙ্গি কেমন হতো অভিব্যক্তি কেমন হতো সব ভেবে ভেবে নেয় সে। আজকাল আর এইটা করতেও ভালো লাগেনা, কেমন কৃত্তিম মনে হয়। মনের মধ্যে বিষিয়ে ওঠে বারবার ক্রমাগত এমন যান্ত্রিক ম্যাসেজ দেখতে আর পড়তে পড়তে।
শুয়ে শুয়েই সে মুখের সামনে আবার ফোনটা উঠিয়ে ধরলো, অটো ব্রাইটনেস এর প্রভাবে এল একটু কোমলো আবার বাড়লো। সেই ম্যাসেজ, এর পরে আর করেনি ম্যাসেজ সুস্মিতা। এর কি রিপ্লাই দিকে ভাবতে ভাবতেই সেন্টবক্সে আঙ্গুল দিয়ে টোকা দিলো সে, “আসলেই, জানলে তোর জীবন শেষ করার মতন মহান দায়িত্ব নিতাম না।” লিখেই টেন্ট করে দিলো সে। সেন্ট করার পরে মনে হচ্ছিলো এমন ভাবে লিখা ঠিক হয়নি, ভাবলো সুস্মিতা এমন কেমন ভাবে পড়ছে। সামনে তাকলে কি রেগে হেটে চলে যেত। নাকি থাপ্পড় দিয়ে হাজারটা গালি শুনাতো, রিফাতই ওর মুখের দিকে তাকিয়ে এইভাবে বলতে পারতো কি? সুস্মিতা ম্যাসেজ তৎক্ষণাৎ দেখছে, রেগে আছে। সুস্মিতা শেষের ভাগ সময় তৎক্ষণাৎ টেক্সট দেখে। “না রিফাত তুই জানিস। তুই খুবই ভালো ভাবে জানিস, শয়তানের মতন শুধু আমার সব কিছু এলোমেলো করে দিচ্ছিস।” রিফাতের রাগ হলো। এলোমেলো করে দিচ্ছে, ঠিক ছিল কবে সব কিছু। সমস্ত দুনিয়া কি শুধু রিফাত আর সুস্মিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? দুইটা মানুষের আত্মিক মানুষিক শারীরিক জৈবিক আধ্যাতিক ব্যাপারে বাহিরেও তো সমস্তটাই আছে। মানুষ মূলত বাহির থেকেই সেগুলো তার মধ্যে ধারণ করে তাহলে সুস্মিতা কিভাবে বলছে ওর সমস্তটা রিফাত শেষ করে দিচ্ছে। একটা মানুষের সমস্তটা আরেকটা মানুষের কিছু করায় না করায় কি যায় আসে। রিফাত কিছুটা রেগেই টেক্সট করলো, “তোর সমস্তটা শুরু ছিল কবে?” লিখে সে উঠে বসলো।
প্রকৃতির ডাক এসেছে, ঘুম থেকে উঠেই বেগ হচ্ছিলো। ম্যাসেজ করার দরুন যাওয়া হয়নি, এখন সুযোগ এসেছে। কাজ সেরে এসে সুস্মিতার পরবর্তী ঝড় সামাল দেওয়া যাবে, রিফাত চাইলেই কিন্তু এখন আবার সুস্মিতার টেক্সট ইগনোর করতে পারে। অথচ সে চাচ্ছে আবার চাচ্ছে না, সে দেখতে চাচ্ছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে। সে বুঝতে চাচ্ছে আত্মা আরো কতটা কুলষিত করা যেতে পারে। একটা মানুষ আরেকটা মানুষের কতটা খারাপ বের করে আনতে পারে। ঘেঁটে ঘ বানিয়ে উপহাস করার মতন মজা বোধয় আর কিছুতেই মানুষ পায়না। মানুষের নফস এইভাবেই কাজ করে বোধয়, অন্যের পরিস্থিতি ডমিনেট করে নিজের আমিত্বকে চাপিয়ে দেওয়া। আমার শেষ হচ্ছে জন্যে অন্যেরটা কিভাবে শুরু হতে পারে। আমি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি ওকেও সেই, নাহয় সেই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে না গেলেও সেই পরিস্থিতি টের পেতে হবে। তবেই না আমরা মানুষ, অন্যের কিছু বুঝবে না শুধু জানোয়ার। আমি যে ঝামেলায় আছি, আমি যে কষ্টে আছি দুঃখ আর দুঃখের অর্চনা নিত্য ব্যাপার সেইটাই জন্যে অন্যরা না বুঝে অন্যরা না অনুভব করে তাহলে কিভাবে মানুষ হলো? আচ্ছা হউক নিজের দুঃখ অন্য একজনকে বুঝতে দিতে চাওয়া নিজের দুঃখ অন্য একজনকে অনুভব করতে চাওয়া একটা একটা চাপিয়ে দেওয়া ব্যাপার।
হাত মুখ ধুয়ে, একটা রোল কেকের প্যাকেট হাতে দিয়ে দাঁত দিয়ে খোসা এড়াতে এড়াতে ফোন আবার হাতে নিলো রিফাত,“শুরু ছিল তো, তুই সব শেষ করে দিচ্ছিস। বালের মতন করিস সবসময়, এমন ভাবে কথা বলিস। সব সময় আমাকে খারাপ ফিল করাস। আমাকে কষ্ট দেওয়ার তালে থাকিস।😡” কেক চিবাতে চিবারে রিফাত রিপ্লাই দিলো, “এখন তাহলে এইগুলা রাখ। তুই কি চাচ্ছিস সেইটা বল?” সুস্মিতা তৎক্ষণাৎ এ-আই চ্যাট রোবটের মতন রিপ্লাই দিলো, “আমি চাচ্ছি তুই ভালো হয়ে যা, আগের আমার হয়ে যা রিফাত।” রিফাত আবার হাসলো। তার মিনা রাজুর রাজুর মতন বলতে ইচ্ছে করলো, “বড়োই হয়রান লাগে।” তার আর কিচ্ছু হতে ইচ্ছে করে না। যেসব ইচ্ছে ছিল সেগুলাও দিনদিন ফিকে হয়ে আসছে খালি, আজকাল বহুত ঝামেলা করতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে কথা দিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে। কথার তোপে নেকড়ে বাঘের মতন ছিঁড়ে খুঁড়ে খেতে ইচ্ছে করে সবকিছু। আবার সেই অসীম ক্লান্তি, ঘুমে চোখের পাতা একত্রিত হয়ে আসছে বারবার।
সময় সুস্মিতা আর রিফাত দুইজনার একসঙ্গে থাকার জন্যে নানান টপিক খুঁজে বের করতো। যেগুলো তাদের সাময়িকের জন্যে বুঝতে দিতো না কিছুক্ষনের মধ্যে কুরুক্ষেত অপেক্ষা করছে, ওদের কুরুক্ষেত্রই বাস্তব ভুলে থাকার উপায় শুধু ভুলিয়েই রাখে। বাস্তবতা ভুলে থাকা যায় মুছে রাখা যায়না। দুজন দুজনকে এতটা মিজারেবল করে দিচ্ছিলো, রিফাত মাঝে মাঝে ভাবতো ঐ শুধু এমন ভাবে করছে। “আর হয়না সুস্মিতা, ছানি পড়া চোখের ছানি কেটে আনলেও সেই স্নিগ্ধ বিভোর দৃষ্টি থাকেনা।” সুস্মিতা আবার রিপ্লাই দিলো, “বাল বল তুই। তোর সঙ্গে মানুষ কথা বলে। তুই কি মানুষ।” রিফাত হাসলো, “মানুষ বলে কিনা জানিনা তুই তো বলছিস।” সুস্মিতা বললো, “আমিও বলবোনা। আমার জীবনটা জাহান্নাম বানিয়ে দিচ্ছিস তুই। তুইও জাহান্নামে যা।” রিফাত আবার সুস্মিতার মুখের ভাব ধরার চেষ্টা করে নিজের লিখার মধ্যে আবেগ হীনতা ধরে রেখেই বললো, “জাহান্নাম আমি বানাচ্ছি না, জানান্নাম ছিলই। যে জিনিস থাকে নতুন করে আর বানানো যায়না। হয় মেরামত করা যায় নাহলে ভেঙে ফেলা যায়। আমি ভাবতাম ভেঙে ফেলতে পারবো আমি। এখন আর ভাবিনা, একসময়ের হারমোনি আরেক সময় ভেস্তে যাবেই। মানুষ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেনা ধরে রাখতে চায়না। যে লোকটা খাঁচায় পাখি ধরে রাখে। ঘরের কাছে সেও বন্দি।”
লম্বা একটা টেক্সট লিখে বিরতি নিলো রিফাত, সেন্ট করার পরে ইনবক্সে অনেকটা বড়ো দেখাচ্ছিল ম্যাসেজ। সুস্মিতা তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই দিলো, যার মানে এই যে ম্যাসেজ পুরোটা পড়েনি। বোধয় বিরক্তি ধরেগেছে, এমনটা হয় বিরক্তি মানুসের সব অনুভূতির শেষ সীমা। ম্যাসেজ যে পড়েনি তার প্রমান হিসেবেই সে বললো, “এতো বড়ো ম্যাসেজ করবিনা। তোর এতবড়ো ম্যাসেজ পড়ার টাইম আমার নেই।” রিফাতের আবার চরম রাগ হচ্ছিলো, কুৎসিত কিছু গালি দিতে ইচ্ছে করছিলো সুস্মিতাকে। নিজেকে সে সংবরণ করে রেখেছে। সংবরণ না করে রাখলে এতক্ষন গালিগালাজের ডিকশনারি রচনা করে ফেলতো। আর দুঃখের ব্যাপার এই যে রিফাতের মনে হচ্ছে সুস্মিতা রিফাতের গালি খাওয়ার যোগ্য। রিফাত বললো, “সে আমি জানি তোর কাছে সময় নেই, তবুও করলাম। অনেককালের অভ্যাস তো।” এই কথার পরে সুস্মিতা কেমনভাবে তাকাতো দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে, মুখের কোন পেশী কতখানি টানাটানি করে কত সুন্দর নাকি রাগান্নিত নাকি ঘৃনার অভিব্যাক্তি করতো এইটাও জানতে ইচ্ছে করছে। সুস্মিতা বললো, “হু তুই তো সুবই জানিস। তুই সবজান্তা। আমাকে আর ম্যাসেজ করবিনা, তোর ম্যাসেজ অসহ্য লাগছে।” এইটা দেখার পরে রিফাত একবার ভাবলো লিখবে “আচ্ছা আর করবোনা।” পরে ভাবলো থাকে কি দরকার কোনো দরকার নেই। যেইটা হচ্ছে সুস্মিতা যেইটা চাচ্ছে সেইটাই হউক।
টেক্সট শেষ হওয়ার পরপরেই সুস্মিতা নেহাত আনএকটিভ। ব্লক করেনি, করলে ভালো হতো। ফোন রাখতে রাখতে রিফাতের মনে হলো সকালে এখনো দ্বিতীয় প্রকৃতির ডাকে সারা দেওয়া হয়নি। জলদি জলদি সে টয়লেটের উর্দেশে দৌড় দিলো। ফোনটা টেবিলে রাখতে রাখতে কেকের প্যাকেট টার দিকে তাকিয়ে মনে হলো খালি কেক খেয়ে হবেনা প্রাকৃতিক কাজ সেরে এসে কুরকারে ভাত তুলে দিতে হবে। সেদিন এক হালি ডিম্ কিনেছিলো এখনো আছে কিনা দেখতে হবে ফ্রিজে। আছে কিনা বলতে আছেই শুধু ফ্রিজ খুলে নিশ্চিত হয়ে নেওয়ার জন্যে ফ্রিজ খুলে দেখলো। আছে দুইটা ডিম। ডিম একটা ধুয়ে চাল ধুয়ে কুকারে চড়িয়ে সে ওয়াশরুমের বাতি জ্বালিয়ে দিলো বাহিরে থেকে।
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
পড়ার সময় মনে হলো তোর নিজের কথাই পড়ছি।
উত্তরমুছুনঅনেক ভালো হয়েছে 🤍
এইটা "শিউলি ফুল গল্পের ধাঁচে লিখা
উত্তরমুছুন