গল্প
Never Let Me Go movie review
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
never let me go |
‘‘Never let me go’’মুভি রিভিউ(স্পয়লার অ্যালার্ট।)/ রিভিউর থেকে বেশি পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে।
{প্যারাগ্রাফ বড় করার জন্যে দুঃখিত। জানি কেউ পড়েনি তবে তাও, আত্মতৃপ্তি বলে একটা কথা আছে।}
‘আগামী সপ্তাহ থেকে আমারও ডোনেশন শুরু। আমি মাঝে মাঝেই এখানে আসি, এখানে দাঁড়িয়ে ভাবি আমার সেই ভুলে যাওয়া ছোটবেলার কথা। আর দূরে ওই দিগন্তের যেখানে আকাশ আর মাঠ একে অপরকে ছুঁয়ে গেছে সেদিকে দিকে তাকিয়ে কল্পনা করি, সেখানে হয়ত ছোট্ট একটা বিন্দুর মতন ওকে দেখা যাবে। ধীরে ধীরে ও এগিয়ে আসবে আমার দিকে। হয়ত আমাকে দেখতে পেয়ে উল্লসিত হয়ে হাত নাড়াবে। সম্ভবত আমাকে ডাকবে, এই পর্যন্তই। এর বেশি আর ভাবি না, এর বেশি আমি ভাবতে পারি না, ভাবতে চাই না। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের আর তাদের জীবন কি খুবই আলাদা? যাদের আমরা নিজেদের জীবনের বিনিময়ে বাঁচাই? হয়ত না, আমরা সবাই হয়ত একই মানুষ। আমরা সবাই পরিপূর্ণ।’
এখানেই সিনেমা শেষ হয়ে যায়। এই শেষের সংলাপটা ক্যাথি আর ওর নিজের অভ্যন্তরীণ সংলাপ। সে সপ্তাহ আগেই তার সেই ছোটবেলা থেকে চেয়ে আসা টমিকে হারিয়েছে, হারিয়েছে বলতে এমন একটা সময়ের কথা বলা হয়েছে সিনেমায় যেখানে হারানো টাই নিয়ম।
তিনটা মানুষকে কেন্দ্র করে সিনেমা আবর্তিত হয় । টাইম পিরিয়ড লেট নব্বুই দশক এমন একটা সময় অল্টারনেটিভ বাস্তবতার কথা বলা হয়েছে যেখানে মানুষ তার ইন্টারনাল অর্গান যেগুলি ডিফেকটিভ হয়ে যায় বিভিন্ন রোগে তখন সেগুলো রিপ্লেসমেন্টের মাধ্যমে অনেক বছর বেশি বাঁচে। এই বেঁচে থাকার স্পৃহায় আসল মানুষরা যখন জন্ম নেয় তখন ওদের ক্লোন তৈরি করে রাখা হয়। একটা নির্দিষ্ট সময় পর আসল মানুষগুলা অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই ক্লোন গুলার মধ্যে থেকে অর্গান নিয়ে আসল মানুষদের বাঁচিয়ে রাখা হয়। এবং ডোনেট করতে করতে ক্লোন গুলা একসময় মারা যায়। এই ব্যাপারটা ক্লোনরা মেনে নিয়েছে, তাদের জীবন সম্পূর্ণ আসল মানুষদের জন্যে।
তবে ক্লোন হলেও ওদের মধ্যে মানুষের সকল প্রকার আবেগ বিদ্যমান। জৈবিক টান বিদ্যমান, একে অপরের প্রতি তীব্র আকর্ষণ অনুভব করে। খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে মরার আগে অনুভব করা কষ্ট সম্পূর্ণটাই ওদের মধ্যেও আছে।
ছোটবেলায় সিনেমার তিনজন বাচ্চার কথা দেখানো হয়। ওই ক্লোন যারা থাকে ওদের বেসিক কিছু জ্ঞান শিক্ষা দেওয়ার জন্যে একটা কম্বাইন বোর্ডিং স্কুলে পড়ালেখা করানো হয়। সেইখানেই প্রটাগনিস্ট(নায়ক) টমী গল্পের নেরেটর ক্যাথি আর আরেকটা মেয়ে রুথ এর পরিচয়। ক্যাথি আর রুথ বান্ধবী, টমি এদের মিউচুয়াল বন্ধু। ক্যাথি টমীকে ছোটবেলা থেকে পছন্দ করে। টমি একেবারে শান্তশিষ্ট নম্নভদ্র হ্যাঁ মানুষ টাইপের ছেলে। এদিকে রুথ, ক্যাথি আর টমীর ছোটবেলার মেলামেশায় হিংসা করে টমির কাছে মিথ্যে মিথ্যে প্রেমের প্রকাশ করে। ওই ছোটবেলা থেকে ওদের কালচার অনুযায়ী টমি আর রুথ একসঙ্গে থাকা শুরু করে। এদিকে ক্যাথি বেচারা ভেতরে ভেতরে পুরে যাচ্ছে, তবে ও খুশি যে টমি ভালো আছে। কিছু আসলে ওরা যত বড়ো হতে থাকে সিনেমার টেনশন বাড়তে থাকে। একটা সময় পরে টমি আর রুথ টক্সিক হয়ে উঠে।
এমন ভাবেই চলতে থাকে সিনেমা। টমি আর রুথ দুইজনের দুনিয়া একদিকে আর ক্যাথি আলাদা। বড়ো হয়ে যায় ওরা নিজেদের কর্ম বেছে নেয় যতদিন না মারা যাবে ততদিন পর্যন্ত। এর অনেক বছর করে রুথের সঙ্গে একটা হাসপাতালে দেখা হয় ক্যাথির, রুথ দুইবার ডোনেশন দিয়ে মৃত প্রায়। তখন রুথ ক্যাথিের কাছে আফসোস প্রকাশ করে। যে শুধু হিংসার জন্যে ক্যাথি আর টমি কে একত্রে থাকতে দেয়নি রুথ। শেষে রুথ আর টমি আলাদা হয়ে যায় সেই কথাও রুথ বলে। আর ওখান থেকে ভগ্ন রুথকে নিয়ে ক্যাথি টমিকে দেখতে যায়। ততদিনে টমিও দুইবার ডোনেশন দিয়ে ফেলছে। টমিও মারা যাবে।
ওরা তিনজন কিছুদিন একত্রে সময় কাটায়, তৃতীয় ডোনেশনের সময় রুথ মারা যায়। তখন টমি আর ক্যাথি অনেকটা কাছাকাছি আসে। সিনেমায় ব্যাক গ্রাউন্ড স্কোর, আর কিছু সংলাপ, আর কোরিওগ্রাফি আলোছায়া খেলার মাধ্যমে ওদের দুইজনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব যেভাবে দেখানো হইছে তুলনা হয় না। দুইজনের আবেগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল মুখে, চাপা দুঃখ দুইজনেই কিছুদিনের মধ্যে মারা যাবে।
একটা জায়গার কথা না বললেই না, ক্যাথি আর টমি একটা রুমের মধ্যে। টমি অসুস্থ হওয়ায় বিছানায় শুয়ে আছে, রুথ রোলিং চেয়ারে বসে টমিকে কবিতা আবৃত্তি করিয়ে শুনাচ্ছে। যেন এইটা কবিতা আবৃত্তি না, ওদের অভ্যন্তরীণ কিছু কথা। ওরা কবিতার মাধ্যমে বলছে। টমির চোখে বিন্দু বিন্দু জল, গড়িয়ে পড়বে পড়বে করছে পড়ছে না। চোখে আটকিয়ে আছে, দেখার মতন দৃশ্য। এরই মধ্যে ক্যাথি আবৃত্তি থামায়। টমি তখন বলে ‘ থামলে কেনো? পড়ো, শুনতে ভালো লাগছে।’ তখন টমির আগে ক্যাথির চোখ গড়িয়ে জল পড়ে। মনে হচ্ছিল টমির ভাগের কান্নাটা ও নিজেই কাঁদছে। এরই কিছুদিনের মধ্যে তৃতীয় ডোনেশনের সময় টমিও মারা যায়।
শেষে কর্তৃপক্ষ থেকে ডেট দেয় ক্যাথির ডোনেশনের। তখন ক্যাথি একটা মাঠের গাছের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে একেবারে উপরের বলা কথা গুলা বলে।
পুরা সিনেমায় বলা হয়েছে, আমরা জানি মারা যাবো। এইটা নিয়ম। মারা যাওয়াটা সত্যি। আবার সঙ্গে থাকাটাও সত্যি, একে অপরের অংশ হওয়া। কেমন হবে যদি আমরা প্রতিনিয়ত টের পাই আমরা মারা যাচ্ছি, কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা যকৃৎ নিয়ে নেওয়া হবে। এর মাঝেই আমাকে বেঁচে থাকতে হবে। এর মাঝেই আমার অনেক কিছু চাইতে হবে। পেতে হবে, কিছু অপূর্ণতা রাখতে হবে।ক্যাথি রুথ আর টমি এই পুরা ব্যাপারটা আমাদের অস্থিমজ্জায় উপলব্ধি করিয়ে দেয়।রুথের দিক দিয়ে দেখলে এমন হয় জীবনের নব্বুই ভাগ সময় মিথ্যের সঙ্গে কাটিয়ে দিয়েছে? শেষে ক্যাথি আর টমির এক সঙ্গে কাটানো সময় যতই কম হউক মিথ্যের থেকে বেশি।
পার্সোনাল রেটিং 9.9/10
(আমার কাছে সেরা রোমান্টিক সিনেমা।)
IMDb:7.1/10
- লিঙ্ক পান
- X
- ইমেল
- অন্যান্য অ্যাপ
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন